Breaking Posts

6/trending/recent
Type Here to Get Search Results !

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে...



শিতাংশু গুহ  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিহত  ৫৫ বছর বয়সে। এই স্বল্প সময়ে তিনি জাতিকে একটি স্বাধীন দেশপতাকা  একটি মানচিত্র দিয়েছেন। এটিই কি যথেষ্ট নয়তার জীবন থেকে শিশুকালকিশোর  যুবা বাদ দিলে থাকে ৫৫-১৮=৩৭ বছর। জেল খেটেছেন প্রায় ১৪ বছর। ৩৭-১৪=২৩ বছর। মুসলিম লীগের ভুল রাজনীতি করেছেন প্রায় ১০বছর। ২৩-১০=১৩ বছর। অর্থাৎ ১৩-১৫ বছর খোলা আকাশের নীচে রাজনীতি করে তিনি বাংলাদেশ এনেছেন। সেই বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র সাড়ে  বছর। কারাগারের রোজনামচা বা অসমাপ্ত জীবনী পাতায় পাতায় বঙ্গবন্ধুকে আবিষ্কার করা যায় একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ হিসাবে। পিতার শাসনমাতার স্নেহস্ত্রীর ভালবাসাপুত্রকন্যার প্রতি তার আপত্য মমতা সবকিছু আর পাঁচটা বাঙ্গালীর মতোই সাধারণ। এই সাধারণ বঙ্গবন্ধু পুত্রস্বামীপিতাভাই হিসাবে সকল দায়িত্ব পালন করেছেন সুষ্ঠূভাবে। রাজনীতি করেছেন পুরো পরিবারকে সাথে নিয়েস্ত্রী-মাতাপিতা সবাই তাকে সাথ দিয়েছেন। জনগণের সাথে মিশেছেন ভাইয়ের মতবন্ধু মত। মাঝির সাথে সখ্যতাকয়েদিদের মাঝে দেশপ্রেম জাগানোমাঠে-ঘাটে-প্রান্তরে সবাইকে আপন করে নেয়াসকল অবস্থানে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার এক অপূর্ব ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। মানুষকে তিনি ভালোবেসেছেন। মানুষ তাকে ভালোবেসেছে। এরই মধ্যে দিয়েঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে একজন সাধারণ মুজিব কালের আবর্তনে অনন্যঅসাধারণ বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন। 

সোহরাওয়ার্দী হাত ধরে তাঁর রাজনৈতিক উত্থানমুসলিম লীগের ভুল রাজনীতি। নেতার প্রতি সন্মান  আনুগত্য প্রদর্শনে কার্পণ্য করেননি। ‘লড়কে লেঙ্গা পাকিস্তান’ আন্দোলনে তিনি ছিলেন নিষ্টাবান। তিনিই আবার পাকিস্তান থেকে বাইরে এসে বাংলাদেশের জন্মদাতা। পাকিস্তান স্বাধীন হলে সোহরাওয়ার্দী পশ্চিম এবং বঙ্গবন্ধু পূর্ব-পাকিস্তানে অবস্থান করলেও নেতার মৃত্যু পর্যন্ত বঙ্গবন্ধ তাকে আঁকড়ে ধরে ছিলেনশেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভুল করেননি। বাংলার মাঠেঘাটে ঘুরে এবং পাকিস্তানী শাসকদের বিমাতা সুলভ আচরণে তিনি বুঝতে পেরেছিলেনমুসলিম লীগের রাজনীতি বাঙ্গালীর জন্যে নয়নেতার প্রতি শ্রদ্ধার পরও নেতার আদর্শ মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসতে খুব বেশি সময় নেননি।  পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু জীবনে এক আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়একজন মুসলিম লীগারমুসলিম আওয়ামী লীগকে ধর্মনিরপেক্ষগণতান্ত্রিক চেতনায় ‘আওয়ামী লীগ’- রূপান্তরিত করতে তাঁর ভূমিকা অনেক।  সময়ে এটি নি:সন্দেহে এক যুগান্তরী ঘটনা। বাকি পঞ্চাশের দশকষাটের দশকের ইতিহাস সবার জানা। এরপর -দফাআগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান বঙ্গবন্ধুকে বাংলার অবিসংবিদিত নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়। ৭ই মার্চ ১৯৭১- প্রমাণিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ এরপর ২৬মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা। 

আমি ইতিহাসবেত্তা নইযা লিখছি তা মনের গরজ থেকে। আমি নিউইয়র্কে বসে তাঁর কথা বলছিএটিও বঙ্গবন্ধু জন্যেই। যাঁরা তার বিরোধিতা করছেনতাঁরাও তার দেয়া সবুজ পাসপোর্ট নিয়েই বিরোধিতা করছেন। অন্তত জায়গাটুকু পর্যন্ত তাকে স্বীকার করে নিতে আপত্তি কোথায়প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের সমালোচনা হতে পারেওআইসি-তে যাওয়াইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠনআবার বৈপরীত্য বাকশাল গঠন ইত্যাদি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হতে পারেকিন্তু জাতির পিতা  বঙ্গবন্ধু বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বঙ্গবন্ধু  জাতির পিতা মূলতদেশ স্বাধীন হবার আগেই জনতা নির্ধারণ করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু অনুপস্থিতিতেই বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ একাকার হয়ে গিয়েছিলো। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু জাতির সম্পত্তিআওয়ামী লীগের একক সম্পত্তি নয়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ননকিন্তু বঙ্গবন্ধু অনুসারী মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়বর্তমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে ‘পচন’, বঙ্গবন্ধু প্রেমিকদের মধ্যে তা নেইবঙ্গবন্ধু প্রেমিকরা ‘বঙ্গবন্ধু’ দোকান খুলে ব্যবসা করেন না।      

১৯৭০ নির্বাচন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ভোট পায় ৩৯.% সেবার পাকিস্তানের মোট ভোটার ছিলো ৫৬,৯৪১,৫০০। তন্মধ্যে পূর্ব-পাকিস্তানে ৩১.২১১,২২০ এবং পশ্চিম-পাকিস্তানে ২৫,৭৩০,২৮০। ভোট পড়েছিল ৬৩% পূর্ব-পাকিস্তানে ভোট পড়েছিল আনুমানিক ১৯,৬৬৩,০৬৯ (৬৩x৩১,২১১,২২০/১০০=১৯,৬৬৩,০৬৯ভোট। আওয়ামী লীগ পেয়েছিলো ১২,৯৩৭,১৬২ ভোট। আসন না পেলেও আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট পড়েছিলো ,৭২৫,৯০৭ (১৯,৬৬৩,০৬৯-১২,৯৩৭,১৬২,৭২৫,৯০৭ভোট। ৬৭ লক্ষের উপর  ভোটগুলো কাদেরভুট্টো পিপিপি (পাকিস্তান পিপলস পার্টিপূর্ব-বাংলায় ভোট পাওয়ার কোন কারন ছিলোনাএই ভোটগুলো ছিলো মুসলিম লীগ এবং জামাত  অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর। পাকিস্তানের ৩০০ আসনে ৮১টি সিট্ পেয়েছিলো পিপিপি এবং তারা ভোট পায় ১৮.% তিনভাগে বিভক্ত মুসলিম লীগ পায় ১৩.এবং ইসলামী দলগুলো ১৩.% হিসাবটা পুরো পাকিস্তানের হলেও মুসলিম লীগ এবং ইসলামী দলগুলোর শক্তি স্বাধীন বাংলাদেশে একেবারে কম ছিলোনা। এরা পরাজিত হলেও সক্রিয় ছিলোযা টের পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় পঞ্চম সংশোধনী বা ‘বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ রূপ নেয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে। আরো পরে ১৯৮৮ সালে আসে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।  সবই সেই পাকিস্তানী ধারাবাহিকতার ফসল। 

আওয়ামী লীগ একাধারে ক্ষমতায় এক দশকের একটু বেশি।  সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাতামাতি করার মানুষ বা বঙ্গবন্ধু প্রেমিকের কোন কমতি নেই৭৪-৭৫’- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে আমরা এমন দৃশ্য দেখেছিলাম। তাই হয়তো রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমদ দু: করে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্যে কোন বীরউত্তমবীরবিক্রম এগিয়ে আসেননি কথাটা সত্য। প্রকৃতপক্ষে সেদিন আমরা কর্নেল জামিল  কাদের সিদ্দিকী ছাড়া আর কাউকে দেখিনি। আমাদের রাজনীতিকরা প্রায়শবলে থাকেনবিদেশ অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জোর তৎপরতা চলছে। বঙ্গবন্ধু স্বীকৃত  দণ্ডিত ১২ খুনির মধ্যে ৬জন বিদেশে পলাতক। ২৭ জানুয়ারি ২০১০- ৫জনের দন্ড কার্যকর হয়েছে। এরা হচ্ছেনফারুক রহমানসুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানবজলুল হুদামহিউদ্দিন আহমদ এবং একেএম মহিউদ্দিন। পলাতক ৬জন হচ্ছেনলেঃকর্নেল (অব:) রাশেদ চৌধুরীলেঃকর্নেল (অব:) নূর চৌধুরীলেঃকর্নেল (অব:) শরিফুল হক ডালিমলেঃকর্নেল (অব:) খন্দকার আব্দুর রশিদরিসালদার মোসলেউদ্দিনক্যাপ্টেন (অব:) আব্দুল মাজেদ। এদের মধ্যে লেঃকর্নেল (অব:) রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং লেঃকর্নেল (অব:) নূর চৌধুরী কানাডায় আছেন। বাকি ৪জন কোথায় আছেনতা কেউ জানেইনাবলা হচ্ছেমেজর ডালিম হয়তো পাকিস্তানে আছেন। ১৫ আগষ্ট ভোরে ‘আমি মেজর ডালিম বলছি’ যাঁরা শুনেছেনতাঁরা জানেনতাঁর দন্ড কার্যকর করা কতটা জরুরী। দণ্ডিত আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুইতে মারা গেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি রাশেদ চৌধুরীর ফাইল নড়াচড়া হচ্ছে। কতটা কি হবে বলা মুশকিল। শর্ত থাকা অসম্ভব কিছু নয়চীনের সাথে মাখামাখি যুক্তরাষ্ট্র খুব ভালো চোখে দেখছে বলে মনে হয়নাহয়তো এজন্যে বিদেশমন্ত্রী সদ্য বলেছেন, ‘ভারতের সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্কচীনের সাথে ব্যবসা বাংলাদেশ  যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্ক ভালোতবে ‘মধুর’ বলা যাবেনা। রোহিঙ্গা রাজনীতিতে বোঝা যায়বাংলাদেশ বন্ধুহীন। তাইরাশেদ চৌধুরীকে ফিরে পেতে ‘গিভ এন্ড টেক’ নীতি কার্যকর হবে বলে প্রতীয়মান হয়যাহোকবঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হয়নিবঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার ২১ মন্ত্রী মোশতাক মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ পরে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল পঁচাত্তরের পর বলেছিলেন, ‘দেশ আজ ফেরাউন মুক্ত হলো পরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি ন। এইচ টি ইমাম পঁচাত্তর পরবর্তী মুশতাক সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব ছিলেন। জাসদের হাসানুল হক ইনু ট্যাঙ্কের ওপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দেয়ার ছবিটি ইতিহাসতিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রী ছিলেন। তোফায়েল আহমদ বয়স হয়েছে। আশা করবোসেদিনের ঘটনার একটি সত্য  বস্তুনিষ্ট বর্ণনা তিনি লিখে রেখে যাবেনযাতে তার মৃত্যু পর জাতি সেটি জানতে পারেপঁচাত্তরের পর সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি দলছুট এবং মাঝে-মধ্যে আবোলতাবোল বকছেন। তখন আরো কিছু নেতার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিলোযাদের কথা কেউ বলেনাবা জানেনা। এরা অনেকেই তখন কলকাতা পাড়ি জমিয়েছেন। 

কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তাঁর পরেই ছিলেন রংপুরের সুনীল গুহ। পার্বত্য চট্টগ্রামের দীপঙ্কর তালুকদার তখন কাদের সিদ্দিকীর ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন। কলকাতায় তখন যাঁরা ছিলেন তাদের মধ্যে নরসিংদীর এমপি মোসলেউদ্দিনযশোরের এমপি রওশন আলীসাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য যশোরের সুবোধ সরকারশেখ ফজলুল করিম সেলিমজাতীয় ছাত্রলীগের ইসমাত কাদির গামাজাতীয় যুবলীগের খালেদ খুররমআওয়ামী লীগ নেতা লতিফ সিদ্দিকীছাত্রলীগের ওবায়দুল কাদেরহরেকৃষ্ণ দেবনাথআওরঙ্গ এবং আরো অনেকে। ছাত্রলীগ নেতা নুরু হত্যা কাদেরিয়া বাহিনীতে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে যেমনি বরিশালের চিত্ত সুতারের বিশাল ভূমিকা ছিলোপঁচাত্তর পরবর্তীতেও তিনি ছিলেন আশ্রয়স্থল। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই তার সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখতেন। কাদেরিয়া বাহিনী কেন ব্যর্থ হয় সেটা অন্য কাহিনী। কিন্তু ওই সময়কার অনেক ছাত্রনেতা হারিয়ে গেছেন। সফল তালিকার শীর্ষে ওবায়দুল কাদের। ভারত থেকে ফিরে তিনি ধরা পড়েনঅত্যাচারিত হন। পরে ছাত্রলীগ সভাপতিএখন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিবিধ কারণে তখনকার নেতাকর্মীরা এদিক-ওদিক ছিটকিয়ে পড়লেও এদের ভোলা অনুচিত। কাদের সিদ্দিকী পারেন  অনুল্লিখিত ইতিহাস লিখে রেখে যেতে।

আওয়ামী লীগ যেমন বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার মত নেতা জন্ম দিয়েছেতেমনি মুশতাক আহমদ মত বিশ্বাসঘাতকেরও জন্ম আওয়ামী লীগের ভেতরে। কাদেরিয়া বাহিনীর সংগ্রামের ব্যর্থতার পেছনেও এই বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভারত-ভীতি কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ তার মৃত্যু ঠিক পরই ভোল পাল্টে ‘জয়বাংলা’ চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলোবর্তমান আওয়ামী লীগের চেহারাটা এখন কেমনমদিনা সনদহেফাজতের সাথে সখ্যতামডেল মসজিদ  ইসলামী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র নির্মাণকওমি সনদের স্বীকৃতি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ঠিক মানায় নাএটি বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ তা চেনাই যায়নামুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান ‘জয়বাংলা’, নেতাকর্মীরা এখনো দেনকিন্তু তাদের অনেকের মনন  চেতনায় ‘জিন্দাবাদ কারণহয়তো অনুপ্রবেশ। নাআরো কিছু আছেবঙ্গবন্ধু হত্যার জন্যে অনেকেই এখনো নেতাদের দায়ী করেনতেমনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের বর্তমান ‘আবছা চেহারা’ বা জননেত্রী শেখ হাসিনার কিছু হলেনেতৃবৃন্দ দায়ী থাকবেন বটে!! বঙ্গবন্ধুর দলটির দুর্দশার কারণে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মত দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীবা বা শফি হুজুরের মত স্বাধীনতা বিরোধীদের বিশাল জনপ্রিয়তা এবং এমনকি সাঈদী মৃত্যদন্ড থেকে রেহাই পেয়ে যানবা শফি হুজুর ‘জামাই আদরে’ থাকেন। বাস্তবতা হচ্ছেবঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে মানুষ এখন দিনে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে রাতে সাঈদীর ওয়াজ শুনে ঘুমাতে যায়

বঙ্গবন্ধু হত্যার তিনধারায় বিচার হওয়া দরকার ছিলো। রাজনৈতিকবিদেশী সম্পৃক্ততা এবং সামরিক সংযোগ। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত রাজনৈতিক নেতাদের পরিচয় জানা দরকার। সামরিক বাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট হওয়া উচিত। তখনকার তিন বাহিনী প্রধানের ভূমিকা কি ছিলো জানা দরকার। বিদেশী ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটিত হওয়া উচিত। আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশের সময় কি এখনো হয়নি? ‘কান টানলে মাথা আসে’,  উদৃতি আবারো প্রমাণিত হবেযদি আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের বিশদ তদন্ত হয়বেরিয়ে আসবে -৭ই নভেম্বরের তথাকথিত সংহতি দিবস ষড়যন্ত্রের কাহিনী। জিয়া হত্যাকান্ডজেনারেল মনজুর হত্যাকান্ডক্যামেরা ট্রায়ালের মধ্যে দিয়ে ১৩ মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার  অসংখ্য সেনা অফিসারজোয়ানের ফাঁসি ইতিহাস মানুষের জানা দরকার। ১৯৭৭ ০২রা অক্টবরের সামরিক অভ্যুথানের ইতিহাস জানা দরকার। কাউকে হেয় করা বা প্রতিশোধ নয়জাতি কল্যানেই ওসব জানা দরকার। আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের পরপরই ১৬ আগষ্ট দুপুরে জেনারেল জিয়া  খালেদ মোশাররফ নুতন সরকারকে অভিনন্দন জানান। অথচ খালেদ মোশাররফ নাকি আওয়ামীপন্থীএকইদিন১৬ই আগষ্ট ১৯৭৫ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাম পত্রিকা বলেছিলো: ‘ করুন মৃত্যুই যদি মুজিবের ভাগ্যে লেখা ছিলো তাহলে বাংলাদেশ সৃষ্টি কোন প্রয়োজন ছিলোনা ২০২০’ - দাঁড়িয়ে কি একইভাবে বলা যায়বাংলাদেশ যদি মিনি পাকিস্তানই হবে তাহলে কি দরকার ছিলো এই স্বাধীনতার

পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধু ঘাতকরা যেভাবে পুরুস্কৃত হয়েছিলেন এর একটি হিসাব আমরা পাই বাংলাদেশ গেজেট (//১৯৭৬থেকেকর্নেল শরিফুল হক ডালিম চীনা বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রথম সচিবের দায়িত্ব পানলেঃ কর্নেলআজিজ পাশাপ্রথম সচিবআর্জেন্টিনামেজর মহিউদ্দিনদ্বিতীয় সচিবআলজেরিয়ামেজর শাহরিয়ার রশীদদ্বিতীয় সচিবইন্দোনেশিয়ামেজর বজলুল হুদাদ্বিতীয় সচিবপাকিস্থানমেজর নূর চৌধূরীদ্বিতীয় সচিবসৌদী আরবমেজর শরীফুল হোসেনদ্বিতীয় সচিবকুয়েতক্যাপ্টেন কিসমত হাসেমদ্বিতীয় সচিবআবুধাবীলেখায়রুজ্জামানতৃতীয় সচিবমিশরলেআবদুল মাজেদতৃতীয় সচিবসেনেগাললেনাজমুল হোসেনতৃতীয় সচিবকানাডা। কারা এদের নিয়োগ দিয়েছেন অথবা কারা এদের দীর্ঘদিন আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেনতা সবার জানাহয়তো সেই পাপের কিছুটা প্রায়শ্চিত করছেন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি-জামাত। পাপ বাপকেও ছাড়েনাএটি বহু পুরাতন উবাচকিন্তু রাজনীতিকরা প্রায়শতা ভুলে যান। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সরকারি প্রশ্রয়ে মৌলবাদের যে রমরমাএটি পাপএটি হওয়ার কথা ছিলোনা। জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতাসীনতারপর কিতার-আর-পর নেইসময়ের সাথে সাথে সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। একদা কামাল আতাতুর্কের তুরস্কের পর মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ ১৯৭২ এর সংবিধানে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সাহস দেখিয়েছিলধর্মনিরপক্ষেতা ছিলো সংবিধানের অন্যতম ভিত্তি। সেই বাংলাদেশে এখন মৌলবাদীদের রমরমাবঙ্গবন্ধ মৃত্যু মানেই কি ধর্মনিরপেক্ষতার মৃত্যু

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.