🖉 শীতাংশু গুহ
ইস্কন জঙ্গী সংগঠন নয়। এঁরা প্রাণী হত্যা করেনা, এজন্যে নিরামিষ খায়। ইস্কন প্রথম ভারতের বাইরে সনাতন ধর্মের প্রচার শুরু করে। কলকাতার প্রভুপাদ আমেরিকায় ইস্কন প্রতিষ্ঠা করেন। ইস্কন হচ্ছে কৃষ্ণ সম্পর্কে সচেতনতা, এদের শ্লোগান ‘হরে কৃষ্ণ’। এটি কোন দেশের নিষিদ্ধ নয়, ১৫৮টি দেশে এটি কৃষ্ণ নাম জপ করে যাচ্ছে। ইস্কন একটি গেরুয়া পতাকা বহন করে, গেরুয়া হিন্দুদের পবিত্র রং। ইসকন দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়ায় না, ধর্মের নামে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেনা, এঁরা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করেনা। সুতরাং ইস্কন জঙ্গী সংগঠন নয়।
যাঁরা বলছেন, ইসকন ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন তাঁরা একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বলছেন। এরা জীব হত্যা করেনা, তাই
এদের পক্ষে সন্ত্রাসী হওয়াটা কঠিন। বিশ্বের রাস্তায় রাস্তায় এঁরা ‘হরেকৃষ্ণ’ গেয়ে বেড়াচ্ছেন, “হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে/ হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে” -এই নাম-গানে ইস্কন নুতন মাত্রা যোগ করেছে। নিজেদের সন্ত্রাসী চেহারাটা ঢাকতেই কেউ কেউ ইস্কনকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে থাকে। আইসিস, আল-কায়দা, বোকাহারাম, বা এমনকি ৯/১১’র সন্ত্রাসীদের সাথে ইস্কনের কোন মিল নেই, ইস্কন কাউকে জোর করেনা, অন্য ধর্মের নিন্দা করেনা।
ইস্কন শুধু হরেকৃষ্ণ গেয়ে যাচ্ছে। এতেই অনেকের ভয়, কারণ ‘সত্যকে’ ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। বাংলাদেশে অনেক হিন্দু মন্দির ইস্কন দখল নিচ্ছে, এতে ভূমিদস্যুরা বিরক্ত, কারণ একজন গরিব হিন্দুর সম্পত্তি জবরদখল যতটা সহজ, ইস্কনের হাত থেকে দখল নেয়া ততটা কঠিন। কারণ ইস্কন সংঘবদ্ধ, তাঁদের ভক্ত আছে, টাকাপয়সা আছে, তাঁরা মামলা লড়তে পারেন। অর্থাৎ ভূমিদস্যুরা সহজে হিন্দু সম্পত্তি দখলের পৈতৃক অধিকার হারাচ্ছে! দোষ ইসকনের? রাগও তাই ইসকনের ওপর। ইস্কন শান্তির কথা বলে, কাজ করে শান্তির পক্ষে। যারা অশান্তিতে বিশ্বাসী তারা ইস্কনকে সহ্য করার কথা নয়, করেও না?
ইস্কন কিছু মানুষকে কৃষ্ণের পথে ফিরিয়ে আনছে, এটিও ভয়, কি-জানি বাবা কি হয়? ইউরোপ-আমেরিকায় ইস্কনের পতাকাতলে সাদা-কালোরা চলে আসছেন, এটাও ভয়? পাকিস্তানে বা ইরাকে বা মস্কোয় ইস্কন রাস্তায় ‘হরেকৃষ্ণ’ গেয়ে বেড়াচ্ছে, এতে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, ভয় থেকেই এই প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের ঘটনা। দাবি আছে, ইস্কন নিষিদ্ধ করতে হবে? এঁরা আহমদিয়াদের ‘অমুসলমান’ ঘোষণা করার দাবিও করে? তাহলে বুঝুন এরা কারা? ইসকন কারো ধর্মগ্রন্থ পোড়ায় না, যাঁরা ইস্কন বন্ধের দাবি করেন, তাদের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে ‘কোরান শরীফ’ পোড়ানোর অভিযোগ আছে।