Breaking Posts

6/trending/recent
Type Here to Get Search Results !

কেন লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ?

সঙ্ঘ শরণ তীর্থযাত্রা-
পথে এসো মোরা যাই।
সঙ্ঘ বাঁধিয়া চলিলে অভয়
সে পথে মৃত্যু নাই।।
কাজী নজরুল ইসলামের এই "সঙ্ঘ শরণ তীর্থযাত্রা"য় গতকাল লাখো মানুষ কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছিলেন  "লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠ" এর কার্যক্রমে । দূর দুরন্ত থেকে মানুষ এসেছেন, একদম প্রান্তিক জায়গা থেকে মানুষ এসেছেন, তাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছুই কিছুই ছিল না, শুধুই সবার সাথে একত্রে গীতা পড়তে চান।

যাঁরা গীতা অনুরাগী তারা প্রশ্ন তুলছেন একদিনের এই গীতা পাঠে কি হবে ? যাঁরা গীতা পাঠের বিরোধী তাঁরা প্রশ্ন করছেন, এই গীতা পাঠ করে ভারতবর্ষের ক্ষুধার সমস্যা মিটবে কী না ?


দুপক্ষের প্রশ্নই সঠিক, দুপক্ষের প্রশ্নেই ধার আছে। প্রথম পক্ষের প্রশ্নের উত্তরে বলি, একদম সঠিক চিন্তার অবতারণা করেছেন । একদিন গীতা পাঠ করে কি হবে ? আমি আরো এগিয়ে বলি, গীতা মুখস্ত করার বই নয়, গীতা আবৃত্তি করারও ছড়া নয়গীতা মুখস্ত করা বা মুখস্থ করে বমি করার বিষয় নয় । গীতা অন্তঃকরণে মিশিয়ে নেওয়ার এক দর্শন। গীতা প্রেম পিরিতের কবিতা নয়। গীতা যুদ্ধের মাঠে দাঁড়িয়ে কিভাবে স্থিতধী থাকতে হয়, কর্তব্য নির্ধারণ করতে হয়ে, তার নির্দেশনামা । তাই সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর তরুণের স্বপ্নে গীতা পাঠের প্রয়োজনের কথা বলেছেন ।  ক্ষুদিরাম বসু ফাঁসির আদেশ শুনে হাসতে হাসতে  বলতে পারেন, আমি গীতা পড়েছি, তাই মৃত্যু ভয় নেই ।

তাহলে একদিন গীতা পড়ে কি হবে ? হবে অনেক, যা ক্রমাগত প্রস্ফুটিত হতে চলছে।

প্রথমত পশ্চিমবঙ্গের ধনী-দরিদ্র , উঁচু-নিচু, সমস্ত মানুষের মধ্যে এক সচেতনতা তৈরী করা গেছে, গীতা শুধুমাত্র গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীদের পড়বার বই নয়, এটা সমস্ত মানুষের দিকদর্শনের এক অন্যতম হাতিয়ার । এই সচেতনতা মানুষের মধ্যে তৈরি করাই ছিল এই "লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠ" এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ।

"লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠ" এর আর এক প্রধান উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল হিন্দু ঐক্যের বার্তা দেওয়া । রাজনীতির ছাপ মারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দল মত নির্বিশেষে, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ম নির্বিশেষে একত্রে, ঐক্যের সুরে গীতা পাঠ করতে পারে, ভারতবর্ষের সনাতন আদর্শকে নিজেদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে পারে, এ এক অনন্যাসাধারণ সাধনা আজকের পৃথিবী প্রত্যক্ষ করল ।

কোরআন যেমন শুধু মুসলমানের, বাইবেল যেমন শুধু খ্রিস্টানের, সেই অর্থে গীতা শুধু হিন্দুদের নয় । গীতা সমস্ত মনুষ্য সমাজের, মনুষ্যত্বে উত্তরণের পাথেয় । এই মনুষ্যত্বের উত্তরণ তাঁরাই চান যাঁরা সনাতন সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন । আজকের অনুষ্ঠানে তাই ছিলেন আরামবাগ টিভির শফিকুল ইসলাম, ঠিক সেইভাবে ছিলেন আমার অত্যন্ত কাছের, অত্যন্ত প্রিয় এক মানুষ, ওসমান মল্লিক। এছাড়াও নাম না জানা অসংখ্য মুসলমান মানুষ, যাঁরা জন্ম সূত্রে মুসলমান কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতিকে নিজেদের পথ চলার পথের করে নিয়েছেন। অনেকেই বললেন, তাঁরা রোজ গীতা পড়েন । শুনে আমার নিজেরও লজ্জা লাগল, আমি রোজ যা পড়ি, সেটা হচ্ছে কোরআন।

এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্নে - এই "লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ" কি ভাত দেবে ? না দেবে না । ঠিক যেভাবে ৪০ দিনের "ইনসাফ যাত্রা" ভাত দেয়নি, আগামী ৭ ই জানুয়ারি ২০২৪ এ ব্রিগেডে "ইনসাফ সমাবেশ" ভাত দেবে না,  ৩৪ বছরের পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট শাসন ভাত দেয়নি ।

কমিউনিস্টরা তাদের চিরচারিত ন্যারেটিভ দেওয়ার চেষ্টা করছেন - স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, "গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভালো" । কিন্তু কোন পরিপ্রেক্ষিতে স্বামী বিবেকানন্দ এ কথা বলেছিলেন, সেই ব্যাখ্যা এই কমিউনিস্টরা কখনো করেন না । এবং "গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভালো"র পরে যে কয়েকটি সংযোজন আছে স্বামী বিবেকানন্দের, সেটাও কমিউনিস্টরা কোনদিন ভুলেও তুলে ধরেন না। মিথ্যা ভয়ংকর, কিন্তু অর্ধ সত্য আরো বেশি ভয়ঙ্কর, এই কথাটা আমাদের বুঝতে হবে ।

স্বামী বিবেকানন্দের এই সংক্রান্ত পুরো বক্তব্যটি এরকম :-

"গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভালো ----"
"হে আমার যুবক বন্ধুগণ, তোমরা সবল হও—তোমাদের নিকট ইহাই আমার বক্তব্য। গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমার স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে। আমাকে অতি সাহসপূর্বক এই কথাগুলি বলিতে হইতেছে; কিন্তু না বলিলেই নয়। আমি তোমাদিগকে ভালবাসি। আমি জানি, পায়ে কোথায় কাঁটা বিঁধিতেছে। আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। তোমাদের বলি, তোমাদের শরীর একটু শক্ত হইলে তোমরা গীতা আরও ভাল বুঝিবে। "

অর্থাৎ শারীরিকভাবে সবল ও শক্তিশালী যুবক গীতার মর্মার্থ সম্যক করে যে ভূমিকা পালন করতে পারবে, দুর্বলের পক্ষে সেই ভূমিকা পালন করা হয়তো বা কঠিন।

তাহলে "লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠ" নিয়ে কমিউনিস্ট বা দেশবিরোধী শক্তিগুলোর এত উৎকণ্ঠা কেন ? কারণটা "লক্ষ্ কণ্ঠে গীতা পাঠ" নয়, কারণটা লক্ষ জাতীয়তাবাদী, সনাতন সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হবে, এক সুরে কথা বলবে, একই সূত্রে লক্ষ মন বাঁধবে  । কমিউনিস্টরা কোনদিন চায়নি জাতীয়তাবাদী, ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ভারতবর্ষের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হোক । ঠিক যেভাবে চাননি জওহরলাল নেহেরু বা তার অনুসারীরা । তাই যেখানেই জাতীয়তাবাদের উন্মেষ হয়েছে, সেখানেই এই নেহেরুপন্থী দেশবিরোধী শক্তি ও কমিউনিস্টরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে জাতীয়তাবাদের উত্থানকে রুখে দেবার জন্য । ভারতবর্ষের কমিউনিস্টদের এই স্বরূপ শুধু আজকের নয়  "ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি" হবে, না "ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি" হবে, এই উচাটনে কানপুরের সম্মেলন থেকে ভেস্তে গিয়েছিল । ফলে ১৯২০ সালের পরিবর্তে ১৯২৫ সালকে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা বছর বলেন  কমিউনিস্টরা ।

জাতীয়তাবাদের উত্থানকে ধ্বংস করে দেবার জন্যই সেদিনই কমিউনিস্টরা অঞ্চলে অঞ্চলে গাধা ও কুকুরের গায়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি একেঁ দাগিয়ে দিয়েছিল - "তেজোর কুকুর" ।ধুরন্ধর ইংরেজ ভারতবর্ষের কমিউনিস্টদের এই স্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছিল। তাই আন্দামানের সেলুলার জেলে বা আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দী থাকা দেশপ্রেমিক বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইংরেজ সরকার মার্কসবাদী পুস্তক পুস্তিকা সরবরাহ করত, যেন বাংলার বিপ্লবীরা জেল থেকে বের হন কমিউনিস্ট হয়ে ।  এক দল মানুষ যারা দেশভক্তির কারণে জেলে গিয়েছিলেন নিজেদের জীবন বিপন্ন করে, তারাই বেরিয়ে এলেন জাতীয়তাবিরোধী দেশবিরোধী কমিউনিস্ট হয়ে। এর সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ চট্টগ্রাম বিপ্লবের অন্যতম নায়ক গণেশ ঘোষ ।

এই চক্রান্তের উৎস অনেক গভীরে । তাই কমিউনিস্টরাই বলতে পারেন - চীনের চেয়ারম্যান আমার চেয়ারম্যান। অথবা ঘোষণা করতে পারেন, রাশিয়া-চীনের স্বার্থ ভারতবর্ষের স্বার্থ থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদের সৌর্যের অর্থ কমিউনিস্ট সাফ এক ইনসাফ l কংগ্রেসিদের সাথে কমিউনিস্টদের কোন লড়াই নেই । কারণ দুটোই একই পথের পথিক । যে কোনো মূল্যে ভারতবর্ষের সনাতন সংস্কৃতিকে ধ্বংস করাই এই দুটো দলের মূল উদ্দেশ্য । কমিউনিস্টদের তৃণমূলকে ভয় পাওয়ার পিছনে কোন কারণ নেই, কারণ তৃণমূল ব্যক্তি মালিকানাধীন আদর্শহীন এক রাজনীতির প্রবাহ যা সুশ্রী মমতা ব্যানার্জির জীবিতকালেই শেষ হয়ে যাবে। 

তাহলে কংগ্রেস-কমিউনিস্টদের ভয়টা কোথায়? ওদের ভয় জাতীয়তাবাদী শক্তি । ভারতের জাতীয়তাবাদের শক্তি লুকিয়ে আছে ভারতবর্ষের আবহমানকাল চলে আসা ভারতীয় সংস্কৃতিতে। যারাই ভারতীয় সংস্কৃতিকে অস্বীকার করেছে তারা শুধু একজন ভারতীয় সংস্কৃতি বিমুখ মানুষ হচ্ছেন না, একজন দেশবিরোধী শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। কমিউনিস্টরা বা জহরলাল নেহেরু ও তাঁর অনুসারীরা যার পরিচয়।

শক্তিশালী জাতীয়তাবাদ ভাত দেয়, দুর্বল জাতীয়তাবাদ ভাত দিতে পারে না । এক শক্তিশালী দেশ দেশের মানুষকে রক্ষা করে ক্ষুধা থেকে, বহিঃ আক্রমণ থেকে । ভারতবর্ষের ক্ষুধার কারণ দীর্ঘদিন  কংগ্রেস কমিউনিস্টদের দেশ লুটের অপশাসন । শক্তিশালী জাতীয়তাবাদই এই লুট বন্ধ করতে পারে, উৎখাত করতে পারে অপশাসনকে, ধ্বংস করতে পারে দেশবিরোধী শক্তিকে ।

ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই গীতা "লক্ষ কন্ঠে" পাঠিত হলে যে এক জাতীয়তাবাদের সুনামি তৈরি হবে, সেই সুনামির সামনে দেশবিরোধী, জাতিবিরোধী, ভারতবর্ষে সনাতন সংস্কৃতি বিরোধী কমিউনিস্টরা ও নেহেরু ঘরানার কংগ্রেসীরা টিকে থাকতে পারবে না । তাই তাঁদের ভয়, আর্ত চিৎকার "লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠ" এর বিরুদ্ধে ।

গতকাল "লক্ষ্ কন্ঠে গীতা পাঠ" অনুষ্ঠানের পর অনেক এসএমএস এসেছে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে । যেখানে প্রত্যেকেই বলেছেন, তাহলে তপন ঘোষের স্বপ্ন হয়তো সত্য হতে চলেছে। তপন ঘোষ সবসময় বলতেন, বাংলা হচ্ছে হিন্দুত্বের গবেষণাগার । বাংলাই পথ দেখাবে হিন্দুত্ব লড়াইয়ে, জিহাদীদের বিরুদ্ধে।।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.